ড. মো. আমজাদ হোসেন১ ড. সমজিৎকুমার পাল২
‘সবাইকে নিয়ে একসাথে বিকশিত হোন, শরীরের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ’। সুন্দর এমন সব কথানিয়েই সাজানো হয়েছে এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টি। শরীরের যত্ন না নিলে শরীর সুস্থ থাকে না। আর শরীর সুস্থ না থাকলে বিকশিত হওয়া যায় না। অতএব, এ কথাগুলো পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আর শেষ কথা হলো কর্মের দ্বারাই নির্ণীত হয় আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা জানি পুরানো কথাগুলো যা কবি কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার লিখে গেছেন ১৮৬১ সালে-
‘দেখি এই চরাচরে, যে যেমন কম্ম করে, সে তেমন ফল পায়। যে চাষা আলস্য ভরে, বীজ না বপন করে,পক্ব শস্য পাবে সে কোথায়?’
(যেমন কর্ম্ম তেমন ফল/ সদ্ভাব শতক/ কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার/ পৃষ্ঠা ১৫৪/ প্রকাশকাল: ঢাকা ১৮৬১)
তাই আমাদের কাজের দ্বারাই প্রকাশিত হয় আমাদের নিজেদের পরিচয়ও। তবে কর্ম করতে হলেও দরকার সুস্থ শরীর। কারণ সুস্থতাই সকল চালিকাশক্তির চাবিকাঠি। আবার সুস্থ থাকার জন্য দরকার শরীরের যতœ নেয়া। শরীরের যত্ন নিতে প্রথমেই দরকার সুষম খাদ্যাভাস। কারণ এর থেকেই গড়ে ওঠে শরীরের যাবতীয় শক্তি। আর এভাবেই বিকশিত হয় দেহ-মন এবং মনন। বিকশিত ও মননশীল মানুষই সমাজের আশীর্বাদ। তারাই পারে সমাজকে সঠিক কাজে পরিচালনা করতে। এভাবেই এগিয়ে গেছে মানবসভ্যতা। আজ বিজ্ঞানের এই চরম উন্নয়নের যুগে এসে শরীরের যত্ন নিয়ে সুস্থ থাকার বিষয়টির গুরুত্ব পেয়েছে সর্বাধিক। তাই সুষম খাদ্যাভাসের বিষয়টি এখন অগ্রাধিকার পেয়েছে।
সুষম খাদ্যাভাসের বিষয়টি সামনে এলেই আগে আসে পুষ্টির বিষয়টি। পুষ্টির কথা বল্লেই বলতে হয় নানানরকম খাদ্যের কথা। বিশেষ করে ফলমূল, শাকসবজি, ডাল-তেল-মসলাসহ মিষ্টিজাতীয় খাবারের কথা। অন্য সব খাবারের কথা নানাভাবে সামনে এলেও মিষ্টিজাতীয় খাবারের কথা সচরাচর অনুক্ত থেকে যায়। আর এখানেই ঘটে বিপত্তি। কারণ মিষ্টি জাতীয় প্রতিটি খাবারে কিংবা ফসলে রয়েছে উন্নত পুষ্টি যা আমাদের চালিত করে এবং নিয়ন্ত্রিত করে। আরো স্পষ্ট করে বলতে মস্তিষ্কই আমাদের পরিচালিত করে, নিয়ন্ত্রিত করে। আর এই মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায় মিষ্টিজাতীয় খাবার।
মস্তিষ্কের উপযুক্ত বিকাশ ও পূর্ণ কার্যকারিতার জন্য গুড় বা চিনি একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে খাদ্যের শতকরা ১১ ভাগ ক্যালরি চিনি বা গুড় থেকে আসা উচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রেনের জন্য প্রতি মিনিটে গøুকোজ (গুড়/ চিনির সরল উপাদান) দরকার ৫.৫ মিলিগ্রাম, অক্সিজেন দরকার ৩.৫ মিলিগ্রাম, এবং গøুুটামেট দরকার হয় ০.৪ মিলিগ্রাম। এ হিসাবে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের ব্রেনের উপযুক্ত কার্যকারিতার জন্য প্রতি মিনিটে গøুুকোজ দরকার ৭৭ মিলিগ্রাম। অক্সিজেন দরকার ৪৯ মিলিগ্রাম, এবং গøুটামেট দরকার হয় ৫.৬ মিলিগ্রাম। পক্ষান্তরে প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রেন থেকে প্রতি মিনিটে উৎপাদিত হয় ৩.৫ মিলি. কার্বন ডাইঅক্সাইড ও ০.৬ মিলিগ্রাম গøুুটামিন। সে কারণেই চিনি বা গুড় গ্রহণ করা আবশ্যক।
মস্তিষ্কের চাহিদার কথা বিবেচনা করে চিনি বা গুড়ের যে কোন একটি পরিমাণগত ভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে পুষ্টি মানের বিবেচনায় চিনি অপেক্ষা গুড় গ্রহণ করাই ভাল। কারণ গুড়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন রয়েছে। অতএব, আমাদের গুড় খাওয়া দরকার। তবে অবশ্যই সেটা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত হতে হবে। আশার কথা, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিউিট এ পর্যন্ত ৪৭টি ইক্ষুজাত উদ্ভাবন করেছে। এর বেশির ভাগ জাত থেকেই ভাল গুড় উৎপাদিত হয়। উদ্ভাবিত জাত থেকে পছন্দমতো যেকোন একটি ইক্ষুজাত বাছাই করে কোন ইক্ষু চাষী কিংবা গুড় উৎপাদনকারী ভাল গুড় উৎপাদন করতে পারেন। য়
১মহাপরিচালক,২পরিচালক (গবেষণা), বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিউিট, ঈশ্বরদী-৬৬২০, পাবনা, ফোন : ০৭৩২৬৬৬২৮, ই-মেইল : bsridg123@gmail.com